Wednesday, July 16, 2025

অদৃশ্য ছায়ায় চলছে মানিক খোনারের অপ চিকিৎসা

 


প্রতিনিধি সালাউদ্দিন সোহান নোয়াখালী থেকেঃ

নোয়াখালী সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নের হাঁটগাও গ্রামের আব্দুল মালেক প্রকাশ( মানিক  খোনার)পরিচয় চলছে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে  চিকিৎসার নামে  অপ চিকিৎসা। যেখানে এক অদৃশ্য ছায়ায় চলছে মানিক সোনার এর অপ চিকিৎসা। একসময়ের সৌদি প্রবাসী,মোঃ আব্দুল মালেক মানিক প্রবাস জীবন ছেড়ে ২০১৬সাল হতে (মানিক খোনার)পরিচয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নের হাঁট গাঁও গ্রামে চিকিৎসক না হয়েও শুরু করেন হাতুড়ে চিকিৎসা ও খোনারী ব্যবসা। ২ নং ওয়ার্ড হাটগাও গ্রামের আব্দুল গফুর পাটোয়ারী বাড়ির প্রবেশ মুখে,মৃত মোজাফফর মিয়ার ছেলে, মানিক খোনার বিগত ৯ বছর হতে ক্যান্সার ডায়াবেটিক পলিপাস, সংসারে অমিল, বিয়ে না হওয়া, আপস, সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে সারিয়ে দেয়ার আশ্বাসে প্রতারণার মাধ্যমে সোনাইমুড়ী উপজেলা, নোয়াখালী জেলা, তথা দূরদূরান্তের বিভিন্ন জেলার সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। 

সরেজমিনে দেখা যায় প্রতিদিন ভোর হতে মাগরিবের নামাজের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ৪০০ হতে ৫০০ রোগীর চিকিৎসা  দিয়ে যাচ্ছেন। পলিপাস রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন নাকের ভেতরে আম পাতা গোল করে পলিপাসের মাংস পিণ্ডকে আঘাতের মাধ্যমে ক্ষত-বিক্ষত করে রক্ত ক্ষরণের মাধ্যমে। এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানা যায়  অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে প্রায়ই মাথা চক্কর দিয়ে বেহুশ হয়েছেন অনেকেই।এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে অন্যত্র  নিয়েছেন তার অপ চিকিৎসার, চিকিৎসা সেবা।যেখানে মানিকখোনারের এ কার্যক্রমটি চলমান সেটি একটি ছোটখাট স্কুল ভবনের মত। রোগিরা বসার জন্য রয়েছে (১০০)এর অধিক বসার  বেঞ্চ। রোগিদেরকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ ভয়েস এর মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন কার কি লাগবে। রয়েছে তার পরিচালিত বিভিন্ন উপকরণ বিক্রির একটি দোকান। যেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে উল্লেখিত সামগ্রী রোগীরা টাকা দিয়ে কিনে নেন। এ দোকানটি পরিচালিত হচ্ছে তারই লোকের মাধ্যমে।আগত রোগীরা ২০০ হতে ৫০০ টাকায় কিনে নিচ্ছেন এ উপকরণগুলো। রোগী দেখার সময় নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।যে সমস্ত রোগির বড় ধরনের সমস্যা তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তার জেলা সদর মাইজদীর বাষায়। স্থানীয় জন সাধারণের মাধ্যমে জানাযায় এই অপচিকিৎসা পদ্ধতিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে গড়ে তুলেছেন এলাকায় একটি মাদ্রাসা। বিভিন্ন মহলে প্রচার করেন আমি এই ইনকাম দিয়ে ইসলামের খেদমত করি, অথচ ওই মাদ্রাসা সংলগ্ন রয়েছে আগে থেকেই আরেকটি মাদ্রাসা। তিনি ওই মাদ্রাসাটিকে নিজের অর্থায়নে পরিচালনার কথা বললে এলাকাবাসী তাতে রাজি হননি, গড়ে তুলেন নিজের ধান্দাবাজি ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আরেকটি প্রতিষ্ঠান,যার সকল খরছ তিনি নিজেই বহন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মানিক্ খোনারের বাড়ির আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে জানা যায়, নুন আনতে ফান্তা পুরানো মানিক আগে বসবাস করত নিজের গ্রামের  বাড়িতে। খোনারী ব্যবসা শুরু করার পর হতে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মাইজদী জেলা সদরে।এলাকায় নামে বেনামে রয়েছে তার ৬ একরের অধিক সম্পত্তি। নোয়াখালী জেলা সদরে  নিয়েছেন ফ্ল্যাট।

তার এই ধান্দাবাজী ব্যবসা কে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি বাহিনী। কখনো কেউ তার এই কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কথা বললে এদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। এলাকাবাসী অতীতে বিভিন্ন সময় তার এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন। এর আগে মানিক খোনারের  দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক মানবজমিন,যায়যায়দিন, দৈনিক জাতীয় নিশান, দৈনিক নোয়াখালীর সময় পত্রিকাসহ একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের  পর, সাবেক সোনাইমুড়ি উপজেলা ইউএনও টিনা পাল মানিক খোনারের আস্তানায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে,নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও মুসলেকা আদায় করেন,সাবেক নির্বাহী অফিসার  রহিমা বেগম তার আখড়ায় গিয়ে তার এই অপ চিকিৎসা ও কবিরাজি খোনকারী বন্ধ করার বিষয়ে সাবধান করেন এবং বলেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম চালু রাখলে তাকে আইনের আশ্রয়ে নেওয়া হবে। কিছুদিন বন্ধ রাখার পর,তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় আবার কার্যক্রম শুরু করেন।এরপরে সোনাইমুড়ি ইউএন রবিউল ফয়সাল আবার তাকে সতর্ক করে আসেন। তাতেও তিনি কর্ণপাত না করে তার অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছেন। গত (৩) জানুয়ারি ২০১৭ সাবেক ইউ এন ও রবিউল তাকে গ্রেফতার করান। গাড়িতে উঠানোর পর তার অনুগত বাহিনী ইউএনও সাহেবের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং মানিক খোনার কে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।বোমা ফাটিয়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ইউএনও মহোদয় তাকে না পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে তার এহেন কাজের সহযোগী মেয়ে মিম ও মিলন নামক (২) দুজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ইউএনও মহোদয়ের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।মিলন কে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রধান করেন। তার অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন।উক্ত বিষয়ে তার নিজ বাড়ির  লোক তার এবং তার  পালিত বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে নোয়াখালী কোর্টে ৫ এই জানুয়ারি 2017, ১১/১৭ মামলা দায়ের করেন। তার এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকিতে ২০ এই ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মোঃ গোলাম ফারুক বাদী হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটপিটিশন নং ২৩৫৪। গত (২০)  এপ্রিল ২০১৭ মোঃ আবু সাঈদ বাদি হয়ে মানিক খোনার এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত হতে প্রতিকারের জন্য সোনাইমুড়ী থানায়  একটি জিডি করেন, জিডি নং ৯২৫।মহামান্য হাইকোর্ট সর্বশেষ এক আদেশে মোঃ আব্দুল মালেক ওরফে মানিক খোনারের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করেন। তৎকালীন সোনাইমুড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় মানিকখোনারের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। যাহা তৎকালীন সোনাইমুড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৮ এই সেপ্টেম্বর 2017 মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের জবাব প্রেরণ করেন।

মানিক খোনারের চিকিৎসা পদ্ধতি ও খোনারী সম্পর্কে জানতে চাইলে সরেজমিন বার্তা প্রতিবেদককে জানান আমি কুমিল্লা থেকে চিকিৎসা বিষয়ে ট্রেনিং এবং লাইসেন্স নিয়েছি।নাকের পলিপাস এর চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান এটা আমার কুমিল্লার ইনস্টিটিউট থেকে শেখা চিকিৎসা পদ্ধতি।  উনার নিকট পূর্বের হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান তখন আমার লাইসেন্স ছিল না, এজন্য হাইকোর্ট আমাকে আমার  কার্যক্রম নিষিদ্ধের নির্দেশনা দেয়। বর্তমানে আমার লাইসেন্স রয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত। এ প্রতিবেদককে তিনি মামলার ও হুমকি দেন।


মানিক খোনারের  বিষয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাকসুদ আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন সাংবাদিক  ইউএনও নার্গিস আক্তারের নিকট মানিক খোনারের অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে  অবগত করানোর পর,মতামত জানতে চাইলে সাংবাদিকদের  ইউএনও    বলেন মানিক খোনারের দ্বারা কার কি ক্ষতি হচ্ছে বলে উল্টো সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছুড়ে দেন ।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: