মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের টুটিয়াম পল্লী
উন্নয়ন সমিতির আওতাধীন দুটি পুকুর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের নিম্নমানের কাজের কারণে ইতোমধ্যেই পুকুরের দুই
পাশের মাটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা
বিরাজ করছে।
প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ও রহস্যময় ঠিকাদারি পরিবর্তন
পুটিয়াম
পল্লী উন্নয়ন সমিতির আওতায় থাকা পুকুর-১ এর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২০২৪-২০২৫
অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই প্রকল্পের প্রথম চুক্তি হয় এম এস
জাহিদ ট্রেডার্স এর সাথে। কিন্তু স্থানীয় সূত্র ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্পের
কাজ শুরু না করেই এই প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি নতুন করে বিক্রি করে দেয় বিকে
ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী বিষ্ণু কুমার দাসের কাছে।
স্থানীয়দের
প্রশ্ন, “সরকারি প্রকল্প
ব্যক্তিগতভাবে ‘বিক্রি’ করেন কি করে? জনগণের টাকায় প্রজেক্ট হয়, আর সেটি কয়েকজন
ঠিকাদারের পকেটে চলে যায়।” নিয়ম অনুযায়ী, পুকুর খনন কাজ শুষ্ক মৌসুমে সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু প্রকল্প বদলি হওয়ার
কারণে কাজে মারাত্মক বেঘাত ঘটে। বর্ষা মৌসুমের এক-দুই মাস
আগে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যখন পুকুরে ইতিমধ্যেই পানি
জমতে থাকে। ফলে যথাযথভাবে পুকুর খনন সম্ভব হয়নি।
সবচেয়ে
উদ্বেগের বিষয় হলো, নিম্নমানের খনন কাজ এবং কাঠামোগত কাজের কারণে পুকুরের দুই পাড় ধসে
পড়তে শুরু করেছে। পুকুর খননের
মাটি পাশের রাস্তা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এতে পুকুরের
পাড়গুলো ক্রমশ ধসে পড়ছে।
একজন প্রবীণ
স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “পুকুরের পাড়গুলো এভাবে ভেঙে পড়ছে। আমাদের ঘরবাড়ির পাশেই পুকুর।
বৃষ্টি হলে এই ভাঙন আরও বাড়বে। যদি কোনো দিন বড় দুর্ঘটনা হয়, এর দায় কে নেবে?”
প্রকল্পের
আওতায় পুকুরের ঘাটলা নির্মাণ, দুই পাড় সুরক্ষার জন্য পাইলিং, এবং মাটি
সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণের কথা থাকলেও, সেসব কাজও খুবই
নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে এবং দায়সারা ভাবে করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
এই প্রকল্পের
সঙ্গে যুক্ত প্রথম দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এস জাহিদ ট্রেডার্স এবং রয়ে
ট্রেডার্স-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।
বদলি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিকে ট্রেডার্স-এর
স্বত্বাধিকারী বিষ্ণু কুমার দাসের কাছেও জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সৎ
উত্তর দেননি।
স্থানীয়রা
দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, প্রকল্পের কাজ এভাবে চলতে থাকলে সরকারি অর্থ অপচয়ের
পাশাপাশি জনজীবন এবং পরিবেশের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
একজন তরুণ
সমাজকর্মী বলেন, “সরকার কোটি কোটি টাকা পুকুর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়। অথচ ঠিকাদার
আর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেই টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পার ধসে পড়ছে,
আর আমরা আতঙ্কে আছি। আমরা চাই সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত
তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
0 coment rios: